রাঙামাটি শহরে উন্নয়ন বোর্ডের জলাশয় দখলের হিড়িক!


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ০৭:০৩ এএম, ২০২১-০৩-২৭

রাঙামাটি শহরে উন্নয়ন বোর্ডের জলাশয় দখলের হিড়িক!

রাঙামাটি শহরে ছুটির দিনের সুযোগ নিয়ে দিনে-দুপুরে জলাশয় দখল নিয়েছে স্থানীয় একটি চক্র। রাঙামাটি পৌরসভার পেছনে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বদ্ধ জলাশয়টির পানি শুকিয়ে গেলে বিশাল একটি অংশ শুক্রবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ে প্রকাশ্য দিবালোকে খুঁটি গেড়ে বেড়া দিয়ে ড্রামশিট লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।

জনৈক পিপলু ও তার নিকট্মাতীয় ক্ষমতাসীনদলের এক ছাত্রনেতার পরিবার কর্তৃক জলাশয়ের জায়গা দখলের মূল হোতা বলে জানাগেছে। শুক্রবার বেলা এগারোটার সময় স্থানীয়দের মাধ্যমে খবরপেয়ে ঘটনাস্থলে ছবি তুলতে গেলে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্য করে অশ্রাব্য ভাষায় হুমকিও দিয়েছেন সরকারী চাকুরে পিপলু। 

এদিকে, বিষয়টি জানতে পেরে নিজেদের জলাশয় দখলের বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে দেখার জন্য উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারি কাউছার হোসেনকে ঘটনাস্থলে পাঠালে তিনিও ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন এবং বিষয়টি উদ্বর্তন কর্মকর্তা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য বাস্তবায়ন হারূনুর রশিদকে (উপসচিব) বিষয়টি অবহিত করা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। 

এদিকে, বিষয়টি শুনে ঘটনাস্থলে লোক পাঠিয়েছেন এমন তথ্য জানিয়ে জনাব হারূনুর রশিদ প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, উক্ত জলাশয়টি মূলত উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য পরিকল্পনার দায়িত্বে থাকা উপসচিব পদ মর্যাদার ড. প্রকাশ কান্তি সাহেব বিষয়টি দেখাশুনার দায়িত্বে রয়েছেন। 

সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সালে আলাপ করে জানাগেছে, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের মালিকানাধীন এই বদ্ধ জলাশয়টি দীর্ঘদিন ধরেই লিজ দিয়ে আসছিলেন। এই লিজকালীন সময়ে উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ তেমন একটা তদারকি করতো না।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা ব্যবহার করে উক্ত জলাশয়টির দুই পাশের ২০ থেকে ৪০ ফুট পর্যন্ত জলাশয়ের জায়গা দখল করে খুটি ঘেরে এবং পাকা পিলার দিয়ে কেউ কেউ বিল্ডিং পর্যন্ত তুলে দখলে নিয়েছেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বন্ধের দিনগুলোতে পূর্ব পরিকল্পনানুসারে দিনক্ষণ ঠিক করে অধিক শ্রমিক ব্যবহার করে রাতারাতি এই জলাশয়ের জায়গাগুলো দখল করে নিয়েছে দখলকারিরা। 

সংশ্লিষ্ট্য কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিতেই বছরের পর বছর এমনটি করে আসছে দখলবাজরা। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২৬শে মার্চ) স্বাধীনতা দিবসে প্রশাসনের সকলেই যখন সরকারী কর্মসূচী পালনে ব্যস্ত ঠিক এই সময়টাকেই টার্গেট করে জলাশয় দখলের উদ্যোগ নেন জনৈক পিপলু ও তার নিকট আত্মীয় জেলা ছাত্রলীগ নেতা জহিরুল ইসলাম স্বাধীন। যিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গেরদায়ে বহিস্কৃত হয়ে দীর্ঘদিন পর সম্প্রতি আবার দলে পুন:বহাল করা হয়েছে। 

শুক্রবার ঘটনাস্থলে গেলে সোহান নামের স্থানীয় এক যুবক জানান, উক্ত জায়গা নিয়ে মহামান্য হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সেটি মানা হয়নি। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকে নারী নির্যাতনের মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে। অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ইমরানসহ আরো কয়েকজনে জানিয়েছেন, উক্ত জায়গায় বর্ষাকালে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত পানি থাকে; ছোট থেকেই আমরা এখানে গোসল করাসহ খেলাধুলা করে আসছি। আজ সকাল থেকেই দেখছি বেশ কিছু শ্রমিক দিয়ে জায়গাটি দখল করে নেওয়া হচ্ছে। দখলবাজরা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ বাধা দিতে এগিয়ে আসছেনা বলেও জানিয়েছেন তারা। 

এদিকে, বিগত বছর খানেক সময়ে উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ এই জলাশয়টির লিজ বাতিল করে দিয়েছে বলে জানাগেছে। এরপর থেকে উক্ত জলাশয়টি নিজস্ব অর্থায়নে পরিমাপ করে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। এই ওয়াল নির্মাণের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, আমাদেরকে কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ার জন্য বলা হয়েছে আমরা ভয়ে আপাতত ওয়াল নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে কর্তৃপক্ষকে খবর দিয়ে চলে যাচ্ছি। 

এদিকে বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে অসুস্থ হয়ে বাসায় অবস্থান করা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের সদস্য পরিকল্পনা (উপসচিব) ডক্টর প্রকাশ কান্তি চৌধুরী মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, এই দখলের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে উন্নয়ন বোর্ড। তিনি জানান, ইতোমধ্যেই আমরা এই ধরনের দখলের বিষয়টি আমলে নিয়ে উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব সম্পদগুলোর ডিজিটাল ডাটাবেজ তৈরি করেছি। সেই আলোকে উক্ত জলাশয়টির চারপাশেই বাউন্ডারি ওয়াল তৈরি কাজও চলছে। তিনি জানান, উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তিগুলো ও কাগজপত্র ঠিক রাখাসহ দখলবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং আইনী প্রতিকারের জন্য এ্যাডভোকেট নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দখলবাজদের বিরুদ্ধে যা যা করার তার সবটুকুই করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।