এবার অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি সন্ত্রাসীদেরঃ কাপ্তাই হ্রদের একাংশে মাছ ধরা বন্ধ!

সোমবার থেকে নৌ-টহল জোরদার করেছে পুলিশ

আলমগীর মানিক    |    ১২:৩০ এএম, ২০২০-০৯-২২

এবার অর্ধকোটি টাকা চাঁদা দাবি সন্ত্রাসীদেরঃ কাপ্তাই হ্রদের একাংশে মাছ ধরা বন্ধ!

চাঁদাবাজির খাড়া কোপ এবার কাপ্তাই হ্রদের জেলেদের উপর পড়েছে। পাহাড়ি সন্ত্রাসীদের চাঁদার স্কেল বৃদ্ধির পাওয়ার প্রেক্ষাপটে দাবি মেটাতে ব্যর্থ হয়ে মাছ ব্যবসাই বন্ধ করে দিয়েছে রাঙামাটির মৎস্য ব্যবসায়ীরা। এতে জীবন-জীবিকা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে কাপ্তাই হ্রদের অর্ধলক্ষ মৎস্যজীবির। বিগত দুই বছর ধরে সরকারের ব্যাপক তৎপরতার মুখে পাহাড়ে সশস্ত্র তৎপরতায় লিপ্ত থাকা আঞ্চলিক দলীয় সন্ত্রাসীরা অনেকটাই কোনঠাসা অবস্থায় ছিলো। কিন্তু সম্প্রতি আবারো বেপরোয়াভাবেই চাঁদাবাজিতে নেমেছে পাহাড়ের আঞ্চলিকদলীয় সন্ত্রাসীরা। 

চলতি মৌসুমে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরতে থাকা জেলে ও তাদের সওদাগরদের কাছে আঞ্চলিকদলগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা চাঁদা প্রদানের দাবি জানানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংশ্লিষ্ট্যরা। চাঁদা না দিয়ে মাছ ধরলে জেলেদের অপহরণসহ গুম খুন করা হবে বলে হুমকিও দিয়েছে সন্ত্রাসীরা। এমতাবস্থায় আতঙ্কিত প্রায় এক হাজার জেলে তাদের জাল নৌকা গুটিয়ে নিয়েছে। এতে করে গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিনই লক্ষাধিক টাকা হারে লোকসান গুনছে রাঙামাটির প্রায় অর্ধশত মৎস্য ব্যবসায়ী। অন্যদিকে মৎস্য আহরণ কমে যাওয়ায় এক তৃতীয়াংশ রাজস্ব আদায় কমে গেছে বলে জানিয়েছে বিএফডিসি কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যেই বিষয়টি নজরে আসায় ব্যবসায়ীদের ডেকে নিয়ে বৈঠক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণসহ কাপ্তাই হ্রদে এখন থেকে নৌ টহল বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। 

চলতি বছরের পহেলা মে থেকে তিনমাসেরও অধিক সময় মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও আগষ্টের ১০ তারিখে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণ ও বিপনন শুরু হলে এখানকার আঞ্চলিকদলগুলোর পক্ষ থেকে চাঁদা দাবি করে ব্যবসায়ী ও জেলেদেরকে হুমকি প্রদান করা হচ্ছিলো। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ করে দিয়েছিলো সংশ্লিষ্ট্যরা। ইতিমধ্যেই রাঙামাটির কাপ্তাই ও নানিয়ারচর এলাকায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাছ ধরা পুনরায় শুরু হয়। কিন্তু আবারো নতুন করে জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর পক্ষ থেকে কাপ্তাই হ্রদের সুবলং চ্যানেল থেকে রাঙামাটি সদর পর্যন্ত হ্রদ এলাকায় জেলে ও ব্যবসায়ীদের মুঠোফোনের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীরা। 

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কবির আহাম্মদ সওদাগর জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহ ধরে কাপ্তাই হ্রদের সুবলং চ্যানেলে জেলেদের মাছ ধরতে নিষেধ করে দিয়েছে জেএসএস ও ইউপিডিএফ এর লোকজন। আঞ্চলিকদলগুলোর পক্ষ থেকে প্রায় ৬০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ আমাদের ডেকে নিয়ে নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু আমাদের জেলেরা সেটাতে আশ্বস্ত হতে পারছেনা। 

রাঙামাটিস্থ বিএফডিসি’র ব্যবস্থাপক নৌবাহিনীর কর্মকর্তা লে: কমান্ডার তৌহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, বিষয়টি আমরাও জেনেছি। তিনি জানান, এখানকার পাহাড়ি সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবিতে গত ১৫দিন আগে কাপ্তাইয়ে একই ঘটনা ঘটালো, এক সপ্তাহ আগে নানিয়ারচরেও ঘটিয়েছে বিষয়গুলো এখানকার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে মাছ ধরা চালুও করেছে কিন্তু এখন আবার নতুন করে সুবলং থেকে রাঙামাটি সদরের কিছু এলাকায় একই ধরনের কার্যক্রম চালাচ্ছে সন্ত্রাসীরা। তিনি জানান, এতে করে আমাদের ল্যান্ডিং ঘাটে মাছ আসা কিছুটা কমে গেছে। আমি বিষয়টি আমাদের উর্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানিয়েছি। 

এদিকে, রাঙামাটির সদর সাকের্লের দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাপস রঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, আমাদের কাছে এই বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোন ব্যক্তি বা সংগঠন লিখিত অভিযোগ দেয়নি। তারপরও বিষয়টি অবগত হওয়ার পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্তৃপক্ষ জেলে ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছি। সোমবার থেকেই কাপ্তাই হ্রদে নৌ-টহল জোরদার করা হয়েছে। এছাড়া এই ধরনের চাঁদাবাজি-হুমকি প্রদানের মতো কর্মকান্ডের সাথে কারা জড়িত সেই বিষয়ে লিখিত বা সুনির্দিষ্ট্য অভিযোগ পুলিশের কাছে জানানোর জন্য কাপ্তাই হ্রদের সংশ্লিষ্ট্য মৎস্যজীবি ও ব্যবসায়ীদের প্রতি আহবান জানানো হয়েছে।