কাপ্তাই হ্রদে নির্যাতিত ৭ শ্রমিকের খোঁজ ৪ দিনেও মেলেনি!


নিজস্ব প্রতিবেদক    |    ১২:১৯ পিএম, ২০২১-০২-২৩

কাপ্তাই হ্রদে নির্যাতিত ৭ শ্রমিকের খোঁজ ৪ দিনেও মেলেনি!

রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদের ওপারে নির্যাতন করে জিম্মিদশায় রেখে জোরপূর্বক মাছ ধরানোর অভিযোগ করায় সাত শ্রমিককে জোরপূর্বক অজ্ঞাতস্থানের দিকে তুলে নিয়ে গেছে মূল অভিযুক্ত নির্যাতনকারি মাছ ব্যবসায়ি হেলাল উদ্দিন। সরকারের  জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করার চার দিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও হতভাগা শ্রমিকদের খোঁজ এখনো পর্যন্ত পায়নি পুলিশ। স্থানীয় সূত্রের বরাতদিয়ে কোতয়ালী থানা পুলিশও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

ভূক্তভোগী সাতজন শ্রমিককে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে থাকা-খাওয়া নিশ্চিতসহ মোটা অংকের বেতনের আশ^াস দিয়ে রাঙামাটির বালুখালীতে এনেছিলো মাছ ব্যবসায়ি হেলাল। কিন্তু বিগত আড়াই মাস ধরে বালুখালীস্থ জনৈক আছিয়া বেগমের পাহাড়ে কেচকি জ¦ালের খোপে জোরপূর্বক মারধর করে দিন-রাত সার্বক্ষনিকভাবে মাছের জাল টানতে বাধ্য করা হতো।

বিষয়টি স্থানীয় বাসিন্দাদের মাধ্যমে গণমাধ্যমকর্মীরা জানতে পারে। পরবর্তীতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে নির্যাতনের শিকার শ্রমিকরাসহ অভিযুক্ত মাছ ব্যবসায়ি হেলাল ও তার শেল্টারদাতা ক্ষমতাসীনদলের নেত্রী আছিয়াকেও সামনা-সামনি পেয়ে তাদের বক্তব্য রেকর্ড করে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী।

সাথে সাথেই সরকারি জরুরী সেবা ৯৯৯ এর কল করে ঘটনাটি জানানো হয়। সেখান থেকে প্রাপ্ত নির্দেশনানুসারে কোতয়ালী থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই মূল অভিযুক্ত হেলাল তার লোকজন দিয়ে ভূক্তভোগী শ্রমিকদের ইঞ্জিনচালিত বোটে করে অজ্ঞাতস্থানের দিকে নিয়ে পালিয়ে যায়। বিষয়টি স্থানীয়দের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন শ্রমিকদের উদ্ধারে অভিযান পরিচালনাকারি এসআই ওসমান।

এই ঘটনার পরপরই কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে যোগাযোগ করে অপহৃত শ্রমিকদের থানায় হাজির করাতে বলা হয়। কিন্তু চারদিন পার হলেও এখনো পর্যন্ত শ্রমিকদের থানায় হাজির করেনি সংশ্লিষ্ট্যরা।

এদিকে স্থানীয় ইউপি মেম্বার লোকমান জানিয়েছেন, আমাকে থানা থেকে জানানোর পর হেলাল ও তার খোপের মালিক আছিয়া বেগমের সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমাকে কথা দিয়েছিলো যে, সোমবার সন্ধ্যায় শ্রমিকদের থানায় হাজির করবে কিন্তু সেটি তারা করেনি। এখন পর্যন্ত তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ রাখা হয়েছে।

এদিকে, কোতয়ালী থানার অফিসার ইনচার্জ কবির হোসেন জানিয়েছেন, আমরা চেষ্ঠা করছি ভূক্তভোগী শ্রমিকদের উদ্ধার করতে।

এসআই ওসমান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত একাধিকবার তারা থানা আসবে বলে জানালেও তারা আসেনি। আমি আমার উদ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে যা করার করবো।

এদিকে জরুরী সেবার ৯৯৯ এ কল করার ৪দিনেও ভূক্তভোগী হতভাগা সাত শ্রমিক উদ্ধার না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। বিষয়টি নিয়ে একাধিক গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হওয়ার পরেও এখনো পর্যন্ত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনা যায়নি। মাছ ব্যবসায়ি হেলালের খুঁটির জোর কোথায় সেটি খতিয়ে দেখার দাবিও উঠছে জোরালো ভাবে।

প্রসঙ্গতঃ গত শনিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, রাঙামাটি শহরের কোতয়ালী থানাধীন কাপ্তাই হ্রদের ওপারে বালুখালী এলাকায় সাতজন শ্রমিককে নির্মম নির্যাতন করে জিম্মি রেখে জালের নৌকায় কাজ করাচ্ছে জনৈক হেলাল নামের এক মাছ ব্যবসায়ি। জিম্মিদশায় থাকা শ্রমিকরা হলেন,(১) মোঃ রহিম-৪০,সে বরিশালের স্বরূপকাঠি থানাধীন ইন্ধারহাট ইউনিয়নের বিঞ্চুকাটি গ্রামের বাসিন্দা মোশারফ হাওলাদারের সন্তান।(২) রাকিবুল ইসলাম-১৭, সে ভোলা’র চরফ্যাশনের আমেনাবাদ এলাকার আব্দুস কুদ্দুস এর সন্তান। (৩) মোঃ রুবেল-১৮, সে ঝালকাটি জেলার কাঠালিয়া থানাধীন পাতিয়ালঘাটা ইউপি’র ৯নং ওয়ার্ডের জুলখালি গ্রামের মনির হোসেনের সন্তান।(৪) মোঃ জিসান-২২, তার বাড়ি কুমিল্লার দাউদকান্দির চশৈলপাল পাড়াস্থ হাজিবাড়ি এলাকায়। তার বাবার নাম: আব্দুল জলিল। (৫) নাসির-১৮, সে দিনাজপুর জেলার বিরলথানাধীন ৯নং ইউপি’র মঙ্গলপুর গ্রামের ছিদ্দিক হোসেনের সন্তান। (৬)মোঃ রাশেদ মিয়া-৩০, সেকিশোরগঞ্জ জেলাধীন ছাতির ইউপি’র ছাতির চর গ্রামের ফুল মিয়ার ছেলে। (৭) মোঃ ফরিদ-১৫,তার বাড়ি চট্টগ্রামের চকরিয়ায়। বাবার নাম: জলিল, গ্রাম ইলিশিয়া, থানাঃ চকরিয়া। স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে শ্রমিকরা সাংবাদিকদের দেখেই তাদের উপর চলতে থাকা নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেয়।

জিম্মি শ্রমিকরা জানায়, মাছ ব্যবসায়ি হেলাল তাদেরকে ঠিকমতো খাবার-দাবার নাদিয়ে রাত-দিন একাধারে কাপ্তাই হ্রদে মাছ ধরায়। এতে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়লেও নূন্যতম চিকিৎসাও করায় না হেলাল। প্রতিদিনই মরিচ মেখে ভাত খেতে দেওয়া হয় শ্রমিকদের। এছাড়াও হেলালের ভাগিনা নয়নকে দিয়ে শ্রমিকদেরকে বেদড়ক পিটিয়ে প্রতিনিয়তই ভীতিকর পরিস্থিতিতে রাখা হচ্ছে তাদের।