করোনার মধ্যে কেমন হবে এবারের পৌর নির্বাচন?


মোঃ আবদুল নাঈম মোহন    |    ১০:১০ পিএম, ২০২১-০১-২০

করোনার মধ্যে কেমন হবে এবারের পৌর নির্বাচন?

বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রথম ঢেউ শেষে, দ্বিতীয় ঢেউ থেমে নেই মানুষের জীবনের চলার গতি। থেমে নেই রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কোন প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, থেমে নেই সরকার দল ও বিরোধীদলের অনুষ্ঠান, কর্মসূচি কোন প্রোগ্রাম। তাই নির্বাচনও থেমে নেই, বাংলাদেশের নানা নির্বাচন, উপ-নির্বাচন হচ্ছে। চলছে দেশব্যাপী পৌরসভা গুলোর নির্বাচন।

বাংলাদেশে পৌরসভা আছে তিনশত, যার মধ্যে ২০১৫ সালে ৩০ ডিসেম্বর একযোগে ২৩৪ টি পৌরসভা নির্বাচন। পৌরসভার নির্বাচিতগণ ২০১৬ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে শপদ গ্রহণ করে দায়িত্ব পালন শুরু করে। সে হিসাবে চলতি বছরের (২০২১) ফেব্রুয়ারি মাসে পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচিতগণদের মেয়াদ শেষ হবে। স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন ২০১৯ এর ২০ (২) ধারা অনুযায়ী (ক) পৌরসভা প্রথমবার গঠনের ক্ষেত্রে এই আইন বলবৎ হইবার পরবর্তী ১৮০ দিনের মধ্যে এবং (খ) পৌরসভার মেয়াদ শেষ হইবার ক্ষেত্রে ওই মেয়াদ শেষ  হইবার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দেশব্যাপী পৌরসভা গুলির মত, আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারি (রবিবার) ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে, রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন। মহামারি করোনাকালেও পৌরসভা নির্বাচন হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার দেখা দিয়চ্ছে। স্থানীয় রাজনৈতিক মেরুকরণের কারণে মেয়র, সাধারণ আসনে কাউন্সিলর (পুরুষ) ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর (মহিলা) পদে প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের টক্কর হওয়ার পূর্বাভাস দেখা যায়। যার কারণ, তার আগেও রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনগুলো অতীতে ভোটযুদ্ধেও জমজমাট ছিল। মহামারি করোনাকালে সম্পন্ন ভোটচিত্র সত্যিই উল্লেখ্য করার মতো হবে। প্রচন্ড লড়াই ও হাড্ডাহাড্ডি প্রতিযোগিতা করোনাকালীন ভোটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য আর তাতে সম্পন্ন করা হবে রাঙামাটি পৌরনভা নির্বাচন। সামাজিক দূরত্ব, সঙ্গবোধসহ ইত্যাদি মান্য করে নির্বাচিনে অতীতের মতো বিপুল ভোটারের উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের সম্ভাবনাও এবার কম। ফলে বিজয়ের জন্য প্রার্থীদের অনেক কৌশলী পরিশ্রমী হওয়ার পাশাপাশি বিদ্যমান পরিস্থিতি সম্পর্কেও র্পূণ সজাগ থাকতে হবে। ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ খ্রিঃ, রোজ- রবিবার, সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোটগ্রহণ চলবে রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচন। রাঙামাটি পৌরসভার পৌর এলাকায় ৯টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার আছে ৭৮৫৮৭ জন, যার মধ্য পুরুষ ৪৩৮৬৩ জন ও মহিলা ৩৪৮২৪ জন।

ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থীগণদের মনোয়নয়ন পত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল গত ১৭ জানুয়ারী (রবিবার), আর তাতে মেয়র পদে ৫ জন, সাধারণ কাউন্সিলর (পুরুষ) পদে ৪৩ জন ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর (মহিলা) পদে ২০ জন মনোনয়ন পত্র জমা দিয়েছিল। ১৯ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) যাছাই বাছাই করার পর রাঙামাটি নির্বাচন অফিসের সম্মেলন কক্ষে মেয়র পদে ৪ জন, সাধারণ কাউন্সিল (পুরুষ) পদে ৪৩ জন ও সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর (মহিলা) পদে ১৯ জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করে। মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী অমর কুমার দে’র হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদান করার দায়ে ও ২নং (৪.৫.৬) সংরক্ষিত আসনে কাউন্সিলর (মহিলা) প্রার্থী সোমা বেগম পূর্ণিমা’র ঋণ খেলাপির দায়ে মনোনয়ন বাতিল ঘোষণা করা হয়। ২৬ জানুয়ারী (মঙ্গলবার) মনোনয়ন প্রত্যাহার করার শেষ দিন। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৭ জানুয়ারী (বুধবার), প্রতীক বরাদ্দার আগে কোন ধরনের প্রচার-প্রচারণা না করার অনুরোধ জানানো হয়। রাঙামাটি পৌরসভায় ১ জন মেয়র, ৯ জন সাধারণ কাউন্সিলর (পুরুষ) ও ৩ জন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর (মহিলা) নির্বাচিত হবে। এই প্রথম ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ হবে রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে।

রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর (পুরুষ) ও সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর (মহিলা) প্রার্থীরা, মহামারি করোনাকালে সামাজিক দূরত বজায় রেখে ভোটারদের সাথে কুশল বিনিময় এবং খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মহামারি করোনার প্রথম ঢেউয়ের সময় যারা যারা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেছিল। বর্তমান কাউন্সিলরগণ (পুরুষ ও মহিলা) ছাড়াও, যাদের মধ্যে বেশিভাগ মানুষ রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে এবার। প্রতীক বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত প্রচার ও প্রচারণা না করার অনুরোধ করলেও মানছে না প্রার্থীরা। রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে মাঠ চষে বেড়াছে মেয়র ও কাউন্সিলর (পুরুষ ও মহিলা) প্রার্থীরা। যে যার মতো কৌশলে ভোটারদের মন করতে ব্যস্ত। প্রচারের ক্ষেত্রে বাদ পড়ছে না কোন ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান, নিয়মিত বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্টানে অংশ নিয়ে চলাচ্ছে গণসংযোগ। বিভিন্ন রকম উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ছে। যার ফলে ধীরে ধীরে চাঙ্গা হয়ে উঠছে মেয়র, কাউন্সিলর (পুরুষ ও মহিলা) প্রার্থীরা। আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২১ সালের (রবিবার) অনুষ্ঠিত রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমাতাশীন দল, বিরোধী দল ও স্থানীয় দল টিকে থাকা নিয়ে শুরু হয়েছে হিসাব-নিকাশও। চায়ের দোকান থেকে শুরু করে, দলীয় কার্যলয়, ব্যবসায়ী অফিস, সরকারী দপ্তর, পাবালিক প্লেসসহ চলছে রাঙামাটি পৌরসভার নির্বাচনের হাওয়া। রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলরগণদের (পুরুষ ও মহিলা), সমর্থক, শুভাকাংক্ষী ও আত্মীয়স্বজনদের মাধ্যমে প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরছে ভোটারদের কাছে, কি কারণে তারা পৌরবাসীর সেবায় নিয়োজিত হতে চায়, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে চলছে প্রার্থীদের প্রচার-প্রচারণা। সমর্থক ও শুভাকাংক্ষীদের মাধ্যমে চলাচ্ছে ভোট জরিপও, ভোটারদের সমর্থন আদায়ে ঘরোয়া বৈঠক করছে। আর ভোটাদের মতামত নিয়ে ঠিক করা হচ্ছে নির্বাচনের আগাম পরিকল্পনাও।

রাঙামাটি পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের অলি-গলি, পাড়া-মহল্লা, রাস্তা-ঘাট ও বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বয়স্ক মুরবি ও সচেতনমহল থেকে কথা বলে জানা যায়, আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারী রাঙামাটি পৌরসভা নির্বাচনে সংক্ষরিত আসানের কাউন্সিলর (মহিলা) প্রার্থী কম হলেও, সাধারণ আসনে কাউন্সিলর (পুরুষ) প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। যা এখানে যোাগ্যতা ও অভিজ্ঞতার প্রশ্ন রয়েছে। মেয়র ও কাউন্সিলর (পুরুষ ও মহিলা) যারা অসহায় মানুষ ও এলাকার উন্নয়ন সাধন করতে পারবে, তাদেরকে ভোট দিয়ে জয় যুক্ত করবো আমরা, এবার যখন এভিএমে নির্বাচন হবে, ওখানে কোন ধরনের তালবাহানা চলবে না। বর্তমান যারা জনপ্রতিনিধি (কাউন্সিলর) আছে, আবারও যদি প্রার্থী হয়, তাহলে বিগত দিনে কি করেছে এলাকার জন্য খতিয়ে দেখা হবে। বিশ্বে বৈশ্বিক মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রথম ঠেউয়ের সময় যারা কাউন্সিলর (পুরুষ-মহিলা) কে কি করেছে এলাকার মানুষের জন্য তাও আমরা খতিয়ে দেখবো। যারা শুধু প্রচার করার লক্ষে মানুষের পাশে থাকে। ওসব প্রার্থীদের দরকার নাই আমাদের। বর্তমান (কাউন্সিলর) অনেকেই ফেসবুক ও নিউজে আসার জন্য ত্রাণ দিয়েছে যা আমরা জানি। কে কতটুকু অতীতে কাজ করেছে তার উপর ভিত্তি করে আমরা আমাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবো। অন্যদিকে মেয়র ও কাউন্সিলর (পুরুষ-মহিলা) প্রার্থীদের যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা নিয়ে রাঙামাটি শহরের চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোয়রা, কুলিং কর্ণারসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে আলোচনা। প্রার্থীরা কোন রাজনৈতিক দলের সাথে যুক্ত তানিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেয়, মাথা ব্যথা শুধু একটা মেয়র ও কাউন্সিলর (পুরুষ ও মহিলা) কে হলে কে কি করবে, তা নিয়ে চলছে আলোচনা ও সমলোচনা।

সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই নির্বাচনে অংশ নেওয়া মেয়র ও কাউন্সিলর (পুরুষ ও মহিলা) প্রার্থীরা সাধারণ ভোটারদের কাতারে সামিল হতে চেষ্টা করছে।