“শেষ সময়ে খাগড়াছড়িতে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ” 


আল মামুন    |    ১২:০৭ এএম, ২০২১-০১-১৩

“শেষ সময়ে খাগড়াছড়িতে জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণার মাঠ” 

আগামী ১৬ জানুয়ারী ২০২১ শনিবার খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনকে ঘিরে শেষ সময়ে জমে উঠেছে নির্বাচনী মাঠ।প্রচার-প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। মাঠে সরব আওয়ামীলীগের প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরীর নৌকার পালে লেগেছে হাওয়া। সাধারণ ভোটারদের জন সমর্থন নিয়ে সরগরম নৌকার মাঠ।

নির্বাচনী মাঠে সরব আওয়ামীলীগের, বিপরীত মেরুর রাজনৈতিক দল বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী মো.ইব্রাহীম খলিল। এদিকে বিরামহীন প্রচারণায় ভোটারদের মন জয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মোবাইল প্রতীকের রফিকুল আলম। প্রার্থী দিলেও মাঠে তেমন দেখা নেই লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ এর।     

তবে শক্ত অবস্থানে রয়েছে আওয়ামীলীগ,বিএনপি ও স্বতন্ত্র প্রার্থী। ফলে ত্রিমূখী লড়াইয়ে মাঠ দখলে মরিয়া তিন প্রার্থীই। হার-জিত যাই হোক কঠোর অবস্থানে ভোটের ফলাফল প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত অবস্থান নেওয়ার বিষয়টি এখনো অনেকটা ওপেন সিক্রেট। নানা শঙ্কা আর জল্পনা-কল্পনার মধ্যেও ভোটারদের মধ্যে রয়েছে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা।

 দ্বিতীয় ধাপে আগামী ১৬ জানুয়ারী অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনকে ঘিরে প্রথম বারের মত নতুন ইভিএমএ এর সাথে পরিচিত হওয়া নিয়েও ভোটারদের মধ্যে রয়েছে আগ্রহ ও কৌতুহল। ফলে এই পৌর নির্বাচন উৎসবের মধ্যে আরেক নতুন উৎসবে পরিণত হতে যাচ্ছে ১৬ জানুয়ারী ২০২১ শনিবার। ইভিএম নিয়ে নানা আশঙ্কাও রয়েছে ভোটারদের মধ্যে। 

লিপলেট ও প্রচারপত্র বিতরণ,উঠান বৈঠক,পথসভা,গণসংযোগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুকেও চলছে প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা। এবার ভোটারদের কাছে অনেকটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে মেয়র প্রার্থীরা। কারণ শিক্ষা,জনপ্রিয়তা ও পৌরবাসীর কাছে পরিচিত এবং পৌরবাসীর উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে সকল প্রার্থীরাই। তবে কে হচ্ছে খাগড়াছড়ি মিনি সিটির পৌর অভিভাবক তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে ১৬ জানুয়ারী সন্ধ্যা পর্যন্ত। 

মেয়র প্রার্থীদের মধ্যে নির্ভেজাল, ক্লিন ইমেজের, জনসমর্থন ও ভদ্র মানসিকতার লোক হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি রয়েছে নৌকার প্রার্থী নির্মলেন্দু চৌধুরীর। তিনি নির্বাচিত হলে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে সারাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে খাগড়াছড়ি পৌরসভাকে মেগা সিটিতে পরিণত করার প্রতিশ্রুতি রয়েছে তার। এছাড়াও সংগঠনের সকল নেতাকর্মীদের একাট্টা প্রচেষ্টায় এই পৌর নির্বাচনী মাঠে সাধারণ ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছে তিনি। তিনি জানান পৌরসভার শাষক নয়,সেবক হতে চান তিনি।  

অন্যদিকে ন¤্র-ভদ্র,শিক্ষা ও জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে নেই আওয়ামীলীগের চীর প্রতিদ্বন্ধী ধানের শীষের বিএনপির প্রার্থী মো. ইব্রাহীম খলিল। তিনি বলেন, পৌরসভায় প্রভাবমুক্ত নির্বাচন ও কোন কারচুপি না হলে বিএনপির বিজয় সুনিশ্চিত। জয়লাভ করলে তিনি সাধারণ মানুষের মাথা থেকে উচ্চ করের বোঝা ও সকল এলাকায় সমহারে উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তিনিও।  

এদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী রফিকুল আলম দুই দুই বার নির্বাচিত হয়ে পৌর এলাকায় ব্যাপক উন্নয়ন করলেও তার বিরুদ্ধে সাংবাদিক মারধর,ক্ষমতার অপব্যবহার ও আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর তকমা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের সাথে তার রয়েছে নানামূখী বিরোধ। ফলে জনপ্রিয়তা থাকলেও দলের বিরোধীতায় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে তার জন্য। তিনি বলেন, বিগত দিনের পৌর এলাকার উন্নয়ন মুল্যায়ন করে এবং চলমান কাজের সমাপ্তি করতে প্রভাবমুক্ত নির্বাচন হলে জনগণ তাকেই জয়যুক্ত করবেন। 

এদিকে-মাঠে প্রার্থী হয়েও তেমন কোন প্রচার-প্রচারণার দেখা মিলেনি জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতিকের প্রার্থী ফিরোজ আহম্মেদ এর। তিনিও পৌরবাসীর সেবা করার প্রতিশ্রুতি নিয়ে নেমেছিলেন নির্বাচনী মাঠে। 
 
এদিকে-খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহবায়ক রণ বিক্রম ত্রিপুরা বলেন, কোন প্রার্থী যদি নির্বাচনী মাঠে বিশৃঙ্খলা করার চেষ্টা করে প্রশাসন তা শক্ত হারে দমন করবে। বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ সরকার স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ ভোটের মাধ্যমে জনগণের প্রত্যাশা পুরণে সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণে প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি জানান।  

জেলা নির্বাচন অফিসার ও রির্টানিং অফিসার মো: রাজু আহমেদ কোন ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না আশা প্রকাশ করে ইভিএম এ ভোট স্বচ্ছ ও ফলাফল প্রকাশেও দ্রুত সময়ের মধ্যে করা যাবে বলে মন্তব্য করেন। 

এদিকে-খাগড়াছড়ি পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আবদুল আজিজ বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রশাসনের তরফ থেকে সব ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। পৌর নির্বাচনে কেউ ক্ষমতা প্রয়োগ বা বে-আইনি ভাবে কোন কিছু করার চেষ্টা করলে কঠোর হস্থে দমন করা হবে। সে সাথে আইনি প্রদক্ষেপ গ্রহণের প্রশাসন কাউকে ছাড় দিবে বলেও তিনি জানান। এছাড়াও প্রার্থী ও জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনী আচরণ বিধি মেনে নিজেদের দায়িত্বশীল ভুমিকা পালন করবেন বলে তিনি প্রত্যাশার করে পুলিশ প্রশাসন প্রতিটি বিষয়ে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন বলে জানান।  

খাগড়াছড়িতে পৌর নির্বাচনে এবার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৭ হাজার ৮৭ জন। তার মধ্যে পুরুষ ভোটার ২০ হাজার ৩শ ৫১ জন এবং নারী ভোটার ১৬ হাজার ৭শ ৩৬ জন বলে জানা যায়। খাগড়াছড়ি পৌরসভা নির্বাচনে ১৮টি ভোট কেন্দ্রে ১০৯টি বুথে ভোট গ্রহণের কথা রয়েছে। দ্বিতীয় ধাপে ৬১টি পৌরসভার মধ্যে ২৯টি ইভিএম ও ৩২টিতে ব্যালটের মাধ্যমে নির্বাচনের মধ্যে খাগড়াছড়িতেও ইভিএমের মাধ্যমে খাগড়াছড়ি পৌরসভার নির্বাচনী ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে এবার।