রাঙামাটিতে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা!


সৌরভ দে    |    ০১:২০ এএম, ২০২০-০৯-১২

রাঙামাটিতে স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগের নামে প্রতারণা করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে লাখ লাখ টাকা!

রাঙামাটিতে ভূয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে স্বাস্থ্য সেবা প্রশিক্ষণের নাম করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে একটি ভূইফোঁড় কোম্পানী। ট্রেনিং দেয়ার নামে টাকা নেওয়া হলেও মূলত তাদের দিয়ে টেলিমেডিসিন এর দালালি করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যা বিজ্ঞপ্তির শর্তাবলীতে উল্লেখ ছিলোনা। আকর্ষণীয় চাকুরির প্রলোভনে পড়ে টাকা দেওয়া বিভিন্ন বয়সের শ’খানেক নারী পুরুষ এখন এই কোম্পানীর স্থানীয় দায়িত্বপ্রাপ্তের পেছন পেছন দিনরাত ঘুরছে। 

"HHH টেলিমেডিসিন প্রোগ্রাম" এর ব্যানারে ইতিমধ্যে রাঙামাটির ১০ উপজেলা হতে ৯২ জনকে ১০ হাজার টাকা করে বেতনের লোভ দেখিয়ে শুধুমাত্র ট্রেনিং এর জন্য জনপ্রতি ৮ হাজার টাকা করে নিয়ে নিলেও এখন প্রত্যেক চাকুরি প্রার্থীকে ৩০০ জন করে গ্রাহক সংগ্রহসহ নানা শর্তজুড়ে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠানটি। রাঙামাটি স্বাস্থ্য বিভাগের অনুমোদন ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নাম বিক্রি করে সরকারি ডাক্তারি সার্টিফিকেটেরও প্রলোভন দেখাচ্ছে তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটির রাঙামাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুল করিম।

এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রতারণার শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নারী জানিয়েছেন, আমাদেরকে শুরুতে ১০ হাজার টাকা বেতনসহ নানা সুযোগ সুবিধার কথা বলা হয়েছিল যার কারণে আমি তাদেরকে ৮ হাজার টাকা দিয়ে একটি ট্রেনিং করি কিন্তু ট্রেনিং করার পর তারা বলছে প্রত্যেককে কমপক্ষে ৩০০ জন করে গ্রাহক এনে দিতে হবে যা নিয়োগের শর্তে ছিল না। তিনি আরো জানান, ৮ হাজার টাকার ট্রেনিং শেষে প্রেশার মেশিন, ডায়াবেটিস পরীক্ষার মেশিন, ওজন মাপার মেশিন, থার্মোমিটারসহ ডাক্তারি এপ্রন দেওয়ার কথা থাকলেও আমাদেরকে শুধু প্রেশার মেশিন ধরিয়ে দিয়ে বিদায় করে দেওয়া হয়েছে। 

একই প্রতারণার শিকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক নারী জানান, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে কাজের ধরণ হিসেবে উল্লেখ ছিল টেলিমেডিসিনের জন্য জন সচেতনা সৃষ্টি করা কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ৩০০ গ্রাহক নিবন্ধন করাতে হবে। চলতি মাসের ৫ তারিখ pqsnetwork নামের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ২জন ডাক্তার এসে আমাদেরকে প্রেশার মাপা, ডায়াবেটিস পরীক্ষা ও ওজন মাপার উপর একদিনের একটি ট্রেনিং দেয়। ৩০০ গ্রাহক সংগ্রহ করে দিতে পারলে সিভিল সার্জন অফিস থেকে আমাদেরকে একটি সরকারি সার্টিফিকেট দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেয় আবদুল করিম। পরবর্তীতে আমি তাদের প্রতারণার বিষয়টি টের পেয়ে সাংবাদিকসহ প্রশাসনকে ঘটনাটি অবহিত করার কথা বললে তারা ভয় পেয়ে আমার স্বামীকে ৬ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে দেয়।  

বিষয়টি নিয়ে রাঙামাটির সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ৮০০০ টাকা নিয়ে এই রকম একটি ট্রেনিং এর ঘটনা বিলাইছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আমাকে জানানো হয়েছে। তবে এই বিষয়ে আমার অফিস থেকে কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

"তাদের যোগ্যতা কি তা না জেনে টাকার বিনিময়ে এইধরনের কোন ট্রেনিং এর অনুমোদন আমি দেইনি এবং দেবোও না" বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেন এই কর্মকর্তা। 

এদিকে তথাকথিত প্রতিষ্ঠানটির রাঙামাটির দায়িত্বপ্রাপ্ত আবদুল করিম জানিয়েছেন, আমরা সিভিল সার্জন, ডিসিসহ রাঙামাটির প্রত্যেকটি উপজেলার ইউএনও আবার কিছু কিছু ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও অনুমতি নিয়েছি। সিভিল সার্জন স্যারকে আমি নিজে গিয়ে আবেদন দিয়ে এসেছি। তিনি বলেছিলেন এটি আমি যাচাই বাছাই করে দেখবো তাই আমি তাঁর কাছ থেকে রিসিভ কপি নিয়ে সব কাজ করেছি। 

সিভিল সার্জনের অনুমোদন ছাড়া শুধু রিসিভ কপি দিয়ে কিভাবে নিয়োগসহ ট্রেনিং সম্পন্ন করেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে করিম জানান, আমাদের কাছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন আছে। সম্ভবত সিভিল সার্জন স্যারের কাছে মন্ত্রণালয়ের ফোন যায়নি, আমি এখনি তাঁকে মন্ত্রণালয় হতে ফোন দেওয়ার ব্যবস্থা করছি বলে করিম ফোন কেটে দেন।